Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৩rd নভেম্বর ২০২৩

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট


প্রকাশন তারিখ : 2023-10-26

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর ২০২৩) দুপুরে সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষনা করেন।

সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দিন, গীতা পাঠ করেন সিসিকের সহকারি কর কর্মকর্তা জ্যুাতিস চক্রবর্তী, ত্রিপিটক পাঠ করেন সিলেট বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ মহানাম ভিক্ষু এবং বাইবেল পাঠ করেন সিলেট প্রেসবিটারিয়ান চার্চের রেভারেন্ড ফিলিপ সমদ্দার।

অনুষ্ঠানে সিলেট প্রেসক্লাব, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন ইমজা, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগ, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব, সিলেটে কর্মরত দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, সিলেটের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিগণ ও নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সম্মানিত সাংবাদিক ও নাগরিকবৃন্দ,

সহকর্মী কাউন্সিলর এবং কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ

আসসালামু আলাইকুম।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার শুরুতেই আমি আবারো আপনাদের সামনে বাজেট পেশ করার সুযোগ পাওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমার জন্য আজকের বাজেট ঘোষণার দিনটি অন্যবারের চেয়ে একদম আলাদা। কারণ আপনারা সবাই জানেন, দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আজ আমি আমার বর্তমান মেয়াদের সর্বশেষ বাজেট ঘোষণা করছি। মেয়র হিসেবে প্রথমবার যখন আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম তখন থেকেই আমি একটাই দোয়া করেছি, যেদিন আমি এই নগরভবন থেকে বিদায় নেবো, সেদিন যেন সবার ভালোবাসা নিয়ে-সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারি।

আজ এই বিদায়লগ্নে সিলেটের অলিতে গলিতে যেদিকেই যাচ্ছি সবাই যেভাবে আমার জন্য তাদের মনের আকুতি-তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন তা অভাবনীয়। আমার প্রতি লাখ লাখ মানুষের যে আবেগ-যে অনুভূতি, তা ভাষায় প্রকাশের যোগ্যতা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মনিপুরী সম্প্রদায়সহ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আমজনতার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে আমি আপ্লুত-এই ভালোবাসাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

বিগত দুটি মেয়াদে কাজ করতে গিয়ে আমি কতটা বাধা-বিপত্তি-ষড়যন্ত্র ও মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছিলাম তা আপনারা সবাই ভালোভাবেই অবগত আছেন।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, প্রথম মেয়াদে প্রায় দুই বছর আমাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে কারান্তরীণ রাখা হয়, এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর করোনার কারণে প্রায় দুই বছর স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকান্ড থমকে গিয়েছিল। অর্থাৎ আমার দুই মেয়াদের ১০ বছরের মধ্যে প্রায় চার বছরই স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয়েছে। তারপরও যে সময়টুকু আমি পেয়েছি  সিলেট মহানগরবাসীর উন্নয়নে আমি মনপ্রাণ সঁপে দিয়ে আপসহীনভাবে কাজ করেছি, কোন রক্তচক্ষুকে গ্রাহ্য করিনি। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি।

প্রিয় সুধীজন,

সিলেট মহানগরবাসীর আশা আকাংখার অবলম্বন হিসেবে খ্যাত এই বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রতিবার সবার উপস্থিতিতে যে উৎসবময় আবহ সৃষ্টি হয়, সেই আবহ-সেই মিলনমেলা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। আজ এই শেষ বাজেট ঘোষণার লগ্নে আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের সম্মানিত নগরবাসী এবং দেশবাসী ও প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তাদের কাছে দোয়া চাচ্ছি।

আপনারা জানেন, আমি ছাত্রাবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন আমার মাতৃতুল্য পরম শ্রদ্ধাভাজন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সিলেটবাসীর অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও দোয়ার কারণে অনেক প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমি দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে সিলেটবাসীর খেদমত করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য।

যে প্রত্যাশা নিয়ে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন তাদের সেই প্রত্যাশা কতুটুকু পূরণ করতে পেরেছি জানি না, কিন্তু আমি আমার সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এই দুই মেয়াদে কাজ করতে গিয়ে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুলত্রæটি করে থাকি কিংবা মনের অজান্তে কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি সেজন্য নগরবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

এই দুই মেয়াদে কাজ করতে গিয়ে দুই পরিষদের সকল কাউন্সিলরদের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পেয়েছি, সেজন্য তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সাথে আমার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করেছেন তা অতুলনীয়। মাসের পর মাস কখনো গভীর রাতে, আবার কখনো ভোরের আলো ফুটার আগেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় কাজে নেমে পড়েছেন, কখনোবা ছুটির দিনে পরিবারকে সময় না দিয়ে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আমার সাথে ছুটে বেড়িয়েছেন। তাদের এই ত্যাগ-তাদের এই অমানুষিক পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করার সাধ্য আমার নেই। তাদের এই শ্রমের মূল্যায়ন করে গেছেন স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে মেয়র তথা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মতৎপরতা নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য নাগরিক সেবায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কর্মরত আমাদের সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। ‘মেয়র ভালো, কাজ করে...’ বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাসূচক মন্তব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সেবা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামষ্ঠিক কাজের ফসল।

এই অনুপ্রেরণাদায়ী মন্তব্যের জন্য এবং সিলেট নগরীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি সিলেট মহানগরীর প্রায় দশ লাখ নাগরিকদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আজকের এই দিনটিতে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন যাত্রার অন্যতম সহযোগী হিসেবে সিলেটের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, জালালাবাদ গ্যাস, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা, সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদসহ এই মহানগরীর উন্নয়ন ও কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সহযোগী প্রশাসন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। আমার দুঃসময়ের সাথী, আমার অতি আপনজন, যাদের ঋণ অপরিশোধযোগ্য সেইসব গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আমি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

সুধীবৃন্দ,

প্রাচীন জনপদ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শহর সিলেট।  হযরত শাহজালাল (রহ.), শাহপরান (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতিবাহী অনেক জ্ঞানীগুণীর জন্মস্থান সিলেটের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে আমাদের এই নগরী। ১৮৭৮ সালে গঠিত সিলেট পৌরসভা ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হয়। সময়ের পরিক্রমায় পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের ‘তকমা’ অর্জন করেছে সিলেট মহানগরী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অন্য এলাকার তুলনায় সিলেটের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। অথচ সিলেটের খনিজ সম্পদের ভান্ডার এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স সুদীর্ঘকাল থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

তবে বিগত কয়েক যুগে সিলেটের সন্তান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সুবাদে এই অঞ্চলের উন্নয়নে কিছুটা গতি এসেছিল। কিন্তু আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সেই উন্নয়নের গতি আবারো ¯øথ হয়ে গেছে। বিগত দুটি মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালীন অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কোন প্রকল্পের অনুমোদন পেতে আমাদের যতটুকু দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে তা অন্য সিটি কর্পোরেশনকে করতে হয়নি।

অপ্রিয় হলেও সত্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি চরম হতাশ হয়েছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, এই নগরীর জন্য আমি ২০১৪ সাল থেকে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সারি নদীতে ৫ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বড়শালায় ১৩ একর জায়গা অধিগ্রহণসহ প্লান্ট নির্মাণের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও আজ পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।

একইভাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বতন্ত্র সুয়ারেজ সিস্টেম চালু, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে চারটি পার্কিং ব্যবস্থা, ৪টি পৃথক পৃথক খেলার মাঠ ও ৪টি পৃথক পৃথক গরুর হাটের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও এক্ষেত্রে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। আজ শহর রক্ষা বাঁধ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্ল্যান্টসহ নানাবিধ জনস্বার্থমূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু অনেক আগে থেকেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আমি বারবার সরকারের বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাগাদা দেওয়া স্বত্বেও কোন অগ্রগতি নেই। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, গুরুত্ব বিবেচনায় সিলেটের চেয়ে আরো অনেক পিছিয়ে থাকা সিটি কর্পোরেশনকে বড় বড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অন্য সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনারা এই বিষয়ে একটু খোঁজ নিলেই সবকিছু আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।

সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, আপনারা জানেন বিগত বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে সিলেটের লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও কষ্ট সহ্য করেছেন। এই বন্যার পর আমরা সরকারের তরফ থেকে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি, নদী খননসহ নানামুখী আশার বাণী শুনেছিলাম। কিন্তু আপনারাই বলুন এখন পর্যন্ত এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কী না?

অপ্রিয় হলেও সত্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আমার উপর অনেক অবিচার করা হয়েছে। একদিকে সিলেটবাসীর পাহাড়সম প্রত্যাশা অন্যদিকে বিগত দুটি মেয়াদে বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে আমাকে একাই লড়াই করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে হতাশা আমাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু আমি হতোদ্যম হইনি-থেমে যাইনি। সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে আমি সকল অবিচার-ষড়যন্ত্রকে ভুলে গিয়ে বারবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি। সকল প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে বিগত দুটি মেয়াদে বাস্তবায়িত প্রকল্প, চলমান প্রকল্প ও ভবিষ্যতের জন্য আমার প্রস্তাবনাসমূহ এবারের বাজেট বক্তৃতায় আমি উল্লেখ করব।

তার আগে আমি সিলেটের সম্মানিত সেইসব নাগরিকদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি যারা বিগত বছরে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। প্রিয়জন হারানো সেইসব স্বজনদের প্রতি সহানুভ‚তি জানাচ্ছি। প্রয়াত সকলের নাম এই স্বল্পসময়ে উল্লেখ করা যাবে না, সেজন্য শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করছি। বিগত বছর যারা প্রয়াত হয়েছেন সেইসব নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, দৈনিক জালালাবাদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক মানিক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের ৪ বারের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট-এর সভাপতি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মিশফাক আহমদ মিশু, অসংখ্য ফুটবলার তৈরীর কারিগর, প্রথিতযশা ফুটবল কোচ ও সিলেট ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া, বিশিষ্ট সমাজসেবী পিয়ার বক্স, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, জেলা পরিষদ সিলেটের সাবেক প্রশাসক, প্রবীণ রাজনীতিবিদ মরহুম আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান-এর স্ত্রী লীনা চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রয়াত উপদেষ্টা এম এ হক-এর স্ত্রী বিশিষ্ট লেখিকা রওশন জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী সামছুদ্দিন, হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাদ্রাসার মুহতামিম, বরেণ্য আলেম মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, মুরারিচাঁদ কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালেহ মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সালিশ ব্যক্তিত্ব সুলেমান খান, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য এম এ মুনিম (খসরু), সংবাদপত্রের প্রবীণ কর্মী সৈয়দ দারা মিয়া, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, বিশিষ্ট আইনজীবী সুজয় সিংহ মজুমদার, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্রীড়া চক্র, সিলেট এর সহ-সভাপতি মঈন উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতা কার্তিক রায়, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড আফরোজ আলী, মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা প্রদীপ পুরকায়স্থ, বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজী সামছুদ্দিন আহমেদ, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার, ব্যবসায়ী বিনয়েন্দু দে সন্টু, সিলাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল মালিক, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সিলেট সিটি কর্পোরেশন-এর ম্যানেজার মোঃ রেজাউল ইসলাম, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ কুনু মিয়া, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী অঞ্জন কুমার শ্যাম, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর এর সহ-সভাপতি মুহাম্মদ একরামুল হক, সাবেক পৌর কমিশনার ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জুনেদ আহমদ, বিএনপি নেতা ও সিলেট ল’ কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আ ফ ম কামাল, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক, ভাতালিয়া জামে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন রিপন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড ধীরেন সিংহ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডের সহকারী কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক আহমদ চৌধুরী, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শায়খুল হাদিস, সিলেটের বরইকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী আলহাজ্ব হাবিব হোসেন, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সহ-সভাপতি, মহানগর শাখার আহবায়ক মাছুম আহমদ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সাব এডিটর, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশিক মোহাম্মদ, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক, সিটি মার্কেটের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জয়নুল হোসেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সিলেটের সাংবাদিকতা অঙ্গনের একসময়ের সুপরিচিত স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব অজয় পাল, সিলেটের সত্তরের দশকের লেখক ও সাংবাদিক এবং পুরনো দিনের গানের সংগ্রাহক গোলাম রব্বানি চৌধুরী, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা আবু তায়্যিব সৎপুরী, জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম খান, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক আহবায়ক ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হুঁশিয়ার আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ মুহিব উদ্দিন আহমেদ, সিলেট এম সি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসান ওয়ায়েজ, বায়তুল আমান জামে মসজিদের সাবেক মোতাওয়াল্লী মোঃ সায়েস্তা মিয়া, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ফাউন্ডার মেম্বার ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, সিলেটের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সালিশ ব্যক্তিত্ব দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মখন মিয়া, বøæ ওয়াটার শপিং সিটির স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন কবির, বাসসের সিলেট প্রতিনিধি মকসুদ আহমদের পিতা আলহাজ্ব জমশেদ আলী, ইমজার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর এর সিলেট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সজল ছত্রীর মাতা সরলা ছত্রী, সিলেটের ডাক এর স্টাফ রিপোর্টার ইউনুস চৌধুরীর পিতা সামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, আরজদ আলী জামে মসজিদের সেক্রেটারি প্রকৌশলী আলহাজ্ব মোঃ ফখরউদ্দিন, বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী ও প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার এম মকবুল হোসেইন, দেশ টিভি সিলেটের স্টাফ ক্যামেরাপার্সন শ্যামানন্দ দাশের মাতা জ্যোৎ¯œা দাশ, সিলেট প্রতিদিনের সম্পাদক সাজলু লস্করের বড় ভাই আব্দুস সামাদ লস্কর, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, সাংবাদিক বদরুর রহমানের মাতা আছমা খানম, সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এর সদস্য সাইফুল ইসলাম, সিলেটের ডাক এর স্টাফ রিপোর্টার সুনীল সিংহের মাতা প্রমীলা সিনহা, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট মনসুর রশীদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সিলেট প্রতিনিধি আবুল কালাম কাওসারের পিতা সিরাজ উদ্দিন, শুভ প্রতিদিনের সাংবাদিক করিম মিয়ার পিতা সাহাবুদ্দিন, প্রবাসী কবি দিলওয়ার মোহাম্মদ।

 

জাতির বিবেক সাংবাদিকবৃন্দ,

আমি প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে যে কাজটি করা সর্বাগ্রে করা উচিত বলে মনে করেছিলাম সেটি হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে আমি কতটা সফল হয়েছি তা কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরলেই আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।

আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগের মেয়াদ অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সকল কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে নাগরিকদের চলমান হোল্ডিং ট্যাক্স ও বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে উদ্বুদ্ধ করার ফলস্বরূপ দায়িত্ব নেওয়ার বছর অর্থাৎ ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের পরিমান ছিল ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৪২ হাজার ২৭০ টাকা। অর্থাৎ আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র ১ বছরে ১০ কোটি টাকা বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব হয়।

আপনাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই যে সর্বশেষ অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে ১৪ কোটি ১৬ লাখ ১ হাজার ১১১ টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়াও অন্যান্য কর যেমন বিজ্ঞাপন কর, বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল ইত্যাদি ইজারা বাবদ গত ৯টি আর্থিক বছরে আদায় হয়েছে প্রায় ১শ ১১ কোটি টাকা। যা আমার মেয়াদের আগের বিগত দুটি মেয়াদের চেয়ে কয়েকগুন বেশি।

এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স খাতে ফি আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করলেও আপনারা একটি পরিস্কার ধারনা পাবেন। ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ বিগত ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার ১৮০ টাকা। সেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই আদায়ের পরিমান ১০ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৫ টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৯ কোটি টাকা বেশি।

আমার মেয়াদের আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণ। দীর্ঘদিনের অবহেলিত শহরতলীর এলাকাগুলো সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এসব এলাকার জীবনমান ও উন্নয়ন কর্মকান্ড নতুন গতি পাবে। ২৬.৫০ বর্গ কিলোমিটারের সিলেট সিটির নতুন আকার হয়েছে ৫৯.৫০ বর্গ কিলোমিটার, ২৭টি ওয়ার্ড বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৪২টি হয়েছে। সীমানা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত কাজটি একদম শুরুর সময় আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সর্বদা খোঁজখবর নিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। এজন্য তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সম্প্রসারণ কাজটি সহজতর ও দ্রæত হয়েছে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হকের কল্যাণে, সেজন্য আমি তাঁকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ইত্যাদির অবস্থা খুবই খারাপ। সুতরাং সীমানা সম্প্রসারণ করার ফলে যখন এসব এলাকার জনগণ দ্রæত উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুবিধা পাবেন তখনই এই কার্যক্রম স্বার্থকতা পাবে। তবে এখানেও হতাশার চিত্র দৃশ্যমান।   

বর্ধিত এলাকার জনগণের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় দেড় বছর আগে (২০২২ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি) ৪ হাজার ১শ ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলেও এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি নেই। বর্ধিত এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য সকল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেখানে জরুরী সেখানে সরকারের এই নির্লিপ্ততা নতুন ওয়ার্ডের জনগনকে চরমভাবে হতাশ করবে।

সচেতন সাংবাদিকবৃন্দ,

রাস্তা প্রশস্ত করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হলে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা সেই এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যেরও উন্নতি ঘটে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সিলেটের কুমারপাড়া থেকে নাইওরপুল সড়ক, কুমারপাড়া থেকে মানিকপীর রোড হয়ে চৌহাট্টা সড়ক, কিংবা নয়াসড়ক থেকে জেলরোড সড়কের কথা সবার আগে উল্লেখ করতে চাই। ২০১৩ সালে এসব সড়কের কী বেহাল দশা ছিল তা আপনারা জানেন। কিন্তু রাস্তা প্রশস্তকরণের পর এখন এসব জায়গার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। দেশী বিদেশী ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউস, রেস্টুরেন্টসহ নানারকম ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে এসব এলাকায়। জমির দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুন।

শুধু এই সড়ক নয়, আমি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে সিলেট মহানগরীর প্রায় সবকটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। এসব সড়কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আম্বরখানা হয়ে চৌহাট্টা হয়ে জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজার, আম্বরখানা থেকে শাহী ঈদগাহ, শাহী ঈদগাহ থেকে কুমারপাড়া পয়েন্ট, নাইওরপুল থেকে শিবগঞ্জ হয়ে টিলাগড় পয়েন্ট, রিকাবীবাজার থেকে মীরের ময়দান হয়ে সুবিদবাজার পয়েন্ট, বন্দরবাজার থেকে ধোপাদিঘীপাড় হয়ে নাইওরপুল পয়েন্ট, পাঠানটুলা সড়ক ইত্যাদি। এসব রাস্তা প্রশস্তকরণের পাশাপাশি ড্রেন সংস্কার, ফুটপাত নির্মাণ এবং একাধিক রাস্তায় সড়ক বিভাজক তৈরি করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।

এছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পূর্বতন ২৭টি ওয়ার্ডের প্রধান প্রধান সড়কের পাশাপাশি অসংখ্য অলিগলি প্রশস্ত করা হয়েছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে যার বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। জনস্বার্থে বিনামূল্যে ভূমি দান করে সিলেট নগরবাসী যে অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছেন তা দেশের মধ্যে বিরল এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এজন্য যারা মূল্যবান ভূমি দান করেছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়াও সকল সম্মানিত কাউন্সিলর-কর্মকর্তা এবং সিলেটের সুধীজন এই কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমি কথা দিয়েছিলাম যারা ভূমিদান করেছেন তাদেরকে সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে একটি স্মরণলিপি দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রæতি মোতাবেক সকল কাউন্সিলরদের কাছে প্রত্যেক ভূমিদাতার স্মরণলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। প্রত্যেকে স্ব স্ব কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে সেই স্মরণলিপি সংগ্রহ করার জন্য ইতোমধ্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একাধিক ওয়ার্ডে আমি নিজে উপস্থিত থেকেও সেই স্মরণলিপি বিতরণ করেছি।

নতুনভাবে যুক্ত ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা প্রশস্তকরণ কার্যক্রমও শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা টুকেরবাজার, বরইকান্দি, শাহপরান, খাদিমপাড়া এলাকার প্রধান সড়কের দুই পাশে থাকা সরকারী জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করেছি। আমার মেয়াদকালে হয়তো এসব কাজ সম্পন্ন করতে পারব না। আশা করছি, আমার অবর্তমানে নবাগত মেয়র ও কাউন্সিলররা জনস্বার্থে এসব রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ অব্যাহত রাখবেন। 

নতুনভাবে যুক্ত হওয়া সকল ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রতিও আমি আহবান জানাচ্ছি, আপনাদের ওয়ার্ডে যেসব সড়ক ও অলিগলি সরু আছে সেইসকল সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য আপনারা ভূমি দান করুন। এতে জনসাধারণের উপকারের পাশাপাশি আপনাদের আগামী প্রজন্মও লাভবান হবে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি আইকনিক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় দেশের মধ্যে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। দৃষ্টিকটু তারের জঞ্জালমুক্ত এলাকা হিসেবে দৃশ্যমান হয়েছে হযরত শাহজালাল রহ: দরগাহ সড়ক। এছাড়াও আম্বরখানা-চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার হয়ে সার্কিট হাউস পর্যন্ত সড়কও এখন ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন সিলেটের কৃতিসন্তান প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এজন্য তাঁকে আমি শ্রদ্ধার সাথে আবারও স্মরণ করছি। তাঁরই সহোদর মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলাকালে উৎসাহ প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করেন। এজন্য আমি তাঁর প্রতি সিলেট নগরবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমরা সিলেট নগরীর আরো ১১টি সড়কে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়নের প্রস্তাবনা দিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এখানেও শেষপর্যন্ত সিলেটের সাথে চরম বৈষম্যমূলক নীতি দেখানো হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলের জন্য এই প্রজেক্ট অনুমোদন দিলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় সিলেটের প্রজেক্টকে বাদ দিয়ে সিলেটবাসীকে বঞ্চিত করেছেন।    

সুধীজন,

২০১৩ সালের আগের সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। আমার গৃহিত স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী কর্মকান্ডের মধ্যে ছিল সকালের মধ্যেই ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা, ময়লা পরিবহনের গাড়ি বৃদ্ধি করা, ময়লা আবর্জনা সংগ্রহের সময় তা পৃথক পৃথক ব্যাগে সংরক্ষণ করা, সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করা ছিল অন্যতম। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্ব হিসেবে বিবেচিত মেডিকেল ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়ায় স্যানেটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ। ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্যানেটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ এবং প্রিজম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এবং সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে ক্লিনিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্যকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডাম্পিং করার জন্য অটোক্ল্যাপ প্রযুক্তির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অতীতের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। ঝাড়–দারদের পাশাপাশি রোড সুইপার মেশিন দ্বারা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাস্তাঘাট পরিস্কার কার্যক্রমও আমার মেয়াদকালে শুরু করা হয়েছে।

এছাড়াও সম্প্রতি সিলেট সিটির ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে উৎস থেকে বর্জ্য পৃথকীকরণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রতিটি বাসাবাড়িতে ১টি করে লাল ও নীল বালতি এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। লাল বালতিতে অপচনশীল বর্জ্য আর নীল বালতিতে গৃহস্থালির থেকে উদ্ভুত পচনশীল বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয়। এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রদানকৃত প্লাস্টিকের ব্যাগে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন জাতীয় বর্জ্য সংরক্ষণ করা হয়। এসব পৃথক পৃথক অবস্থায় সংরক্ষণ করা বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সংগ্রহ করেন।  

ভবিষ্যতে বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত দেশের আদলে নিয়ে যাওয়ার দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

এখানে আমার মেয়াদকালের আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। আপনারা দেখেছেন আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন সিলেটে মানসম্পন্ন কোন পাবলিক টয়লেট কিংবা গণশৌচাগার ছিল না। অথচ এই নগরীতে প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে, পর্যটকদের সংখ্যাও অগণিত। অথচ মানসম্পন্ন পাবলিক টয়লেট না থাকায় বিপাকে পড়েন অসংখ্য মানুষ।

এজন্য আমার মেয়াদকালে সিলেটের কয়েকটি স্থানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছি। এতে করে অনেকেই উপকার পাচ্ছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এইরকম পাবলিক টয়লেট আরো করা প্রয়োজন। আশা করছি আগামী পরিষদ গুরুত্বপূর্ন স্থানসমূহে আরো এরকম পাবলিক টয়লেট স্থাপন করবেন।

প্রিয় সাংবাদিক ও নাগরিকবৃন্দ,

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাফল্যকে বিচার করতে চাইলে ২০১৩ সালের নগরীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। সচেতন সিলেটবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী জলাবদ্ধতার কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন হতেন। ঐসময় মাত্র এক দেড়ঘন্টার বৃষ্টি হলেই নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো, দীর্ঘসময়েও সেই জলাবদ্ধতা কাটতো না। কিন্তু ঠিক ১০ বছর পর বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার উল্টোচিত্রই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এখন আর বর্ষামৌসুমে এক দেড়ঘন্টার বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা হয় না। গুটিকয়েক রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও একদম স্বল্পসময়ে তা কেটে যায়। পরিসংখ্যানের দিকে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, বিগত ১০ বছরের মধ্যে একমাত্র বিগত বছর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কবলে পড়েছিলেন নগরবাসী। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সেই দুর্ভোগে পড়তে হয়নি নগরবাসীকে।

আপনারা জানেন, বিগত বছর কী কারণে এত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বন্যার অন্যতম কারণ ছিল উজান থেকে নেমে আসা মাত্রাতিরিক্ত ঢলের পানি ও ড্রেজিং না হওয়ার কারণে সুরমা নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া এবং অস্বাভাবিকরকম অতিবৃষ্টি। বর্ষামৌসুমে এখন সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত থাকে তার প্রমান হচ্ছে চলতি বর্ষামৌসুম। ছড়া ও ড্রেন দিয়ে তাড়াতাড়ি পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে এবারের বর্ষামৌসুম প্রায় জলাবদ্ধতামুক্ত ছিল সিলেট। তবে এটাও সত্যি, একনাগাড়ে অস্বাভাবিকরকম বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর কিছু এলাকার নগরবাসী দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। প্রকৃতির বিরুপ আচরণের প্রভাবে সৃষ্ট এই জলাবদ্ধতার দায় আমার উপর কতটা বর্তায় তা বিচারের ভার আমি আপনাদের উপর দিলাম। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীবাহিনী নিয়ে রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমি আমার সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারপরও আমার মেয়াদকালে যেসব নগরবাসী জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছেন তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।  

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি বারবার বলে আসছিলাম, জলাবদ্ধতা ও বন্যাÑএই দুটো বিষয়কে এক করে দেখলে চলবে না। দুটো বিষয় আলাদা। এক্ষেত্রে বাস্তবতাকে স্বীকার করেই আমাদেরকে সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিগত বছরের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বন্যা মোকাবেলায় টেকসই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করলে আমাদেরকে এজন্য চড়া মাশুল দিতে হবে। তাই বন্যা মোকাবেলায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুরমা নদী খনন করা, শহর রক্ষা বাঁধ তৈরী করা, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে খ্যাত হাওর-বিল-পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করাসহ নিচু এলাকায় পানির পাম্পিং স্টেশন করা, ছড়ার সংযোগস্থলে ¯øুইচ গেইট তৈরি করতে হবে।

প্রিয়জন সাংবাদিকবৃন্দ,

আমার মেয়াদে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড হচ্ছে ছড়া ও খাল উদ্ধার। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এসব ছড়া ও খাল উদ্ধারের পাশাপাশি নান্দনিক ওয়াকওয়ে তৈরি করে নগরবাসীর হাঁটাচলার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। বেদখল যাতে না হয় সেজন্য করা হয়েছে রিটেইনিং ওয়াল। এসব ছড়া ও খাল উদ্ধারের কারণে বৃষ্টির পানি এখন সহজেই সুরমা নদীতে পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। নান্দনিক ওয়াকওয়েগুলো পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করছে। চা বাগান সংলগ্ন এলাকা গোয়াবাড়িতে কালীবাড়ি ছড়া সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করে ২৭শ ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং ৭ ফুট প্রশস্থ ওয়াকওয়ে, বসার বেঞ্চ এবং ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। রাতে নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ৯২টি আলোকবাতি স্থাপন করা হয়েছে।

গোয়ালীছড়া সংরক্ষণের পাশাপাশি শাহী ঈদগাহ টিবি গেইট অংশে ওয়াকওয়ে ও মিনি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। সিটিং বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক খুটির পাশাপাশি এখানে ওয়াকওয়ের প্রবেশদ্বারে কফি কর্ণারও রাখা হয়েছে।

একইভাবে হলদি ছড়ার উপশহর অংশে ১৮শ ৮৬ ফুট দৈর্ঘের ওয়াকওয়ে এবং দুটি সৌন্দর্যবর্ধন স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে সিটিং বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক খুটির পাশাপাশি শৌচাগার বøক এবং ফুলের গাছও লাগানো হয়েছে। হলদি ছড়ার টিলাগড় অংশেও দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেট-তামাবিল সড়কের টিলাগড়ে অবস্থিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিস সংলগ্ন হলদি ছড়ার এই অংশে সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত এই ওয়াকওয়ের দৈর্ঘ্য ৭শ ৫ ফুট।

মালনীছড়ার সাগরদিঘীরপাড় অংশে ৬শ ৫২ মিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন। এখানে বসার বেঞ্চের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক বাতি, ফুড কর্ণার, পাবলিক টয়লেট থাকবে। এছাড়াও জল্লারখাল দখলমুক্ত করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ছড়া ও খাল উদ্ধারের পূর্বের চেহারা এবং উদ্ধারের পর বতর্মান চেহারার তারতম্য কতটুকু তা নগরবাসীর কাছে এখন সহজেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ঠিক একইভাবে গাভীয়ার খাল খনন ও সংস্কার এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুগনী ছড়ায় ওয়াকওয়ে, মঙ্গলীছড়া খনন ও সংরক্ষণ, ধোপাছড়া খনন ও সংরক্ষণ, ভুবি ছড়া খনন ও সংরক্ষণ, বাবু ছড়া খনন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সিলেট নগরীতে প্রবাহমান ১১টি ছড়া ও বড় খাল উদ্ধার ছাড়াও সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণ ও ওয়াকওয়ের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট সার্কিট হাউজ থেকে মাছিমপুর ব্রিজ পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ, আরসিসি সড়ক ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং সিসি বøক স্থাপনের কাজ চলমান আছে। আপনারা জানেন ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুরমা অংশের নদীর তীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও উত্তর সুরমার উপশহর মেন্দিবাগ সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড় উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

সচেতন সাংবাদিকবৃন্দ,

একসময় অসংখ্য পুকুর ও দিঘির শহর ছিল সিলেট। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেইসব দিঘি ও পুকুর আজ আর নেই, এখন সিলেট নগরীতে হাতেগোনা কয়েকটি পুকুর ও দিঘি আছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন সেইসব দিঘি ও পুকুরকে খনন করে সৌন্দর্য্যবর্ধন এবং সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করেছে।

এক্ষেত্রে ধোপাদিঘির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। কারণ এই দিঘিটি একসময় অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে ডোবার আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে এই দিঘিকে খনন করে দিঘির চারপাশে নান্দনিক ওয়াকওয়ে এবং সৌন্দর্যবর্ধন করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজে অর্থায়ন করেছে ভারতীয় সরকার। এজন্য তাদেরকে আমি নগরবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ধোপাদিঘি এখন নগরবাসীর জন্য নির্মল পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যময় ঘুরে বেড়ানো ও হাঁটাচলার একটি স্থান হয়েছে। ৪.৯১ একর ভূমির ধোপাদিঘি সংরক্ষণ করে দীঘির চর্তুদিকে ১৮শ ৭৬ ফুট দৈর্ঘের ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২টি দৃষ্টিনন্দন ঘাট, সুপরিসর বসার জায়গা, সীমানা রেলিং, আলোকবাতি এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। চমৎকার এই নকশা প্রণয়নের জন্য আমি স্থপতি সুব্রত দাশ এবং তার টিমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  

ধোপাদিঘি ছাড়াও কাজীটুলার কাজী দিঘির জলাশয় সংরক্ষণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে এবং দিঘির দুই পাশে প্রশস্ত সড়ক করা হয়েছে। সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরটি সংস্কার করে উন্মুক্ত সুইমিং পুলে রুপ দেওয়া হয়েছে। নাইওরপুলের সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের দিঘিকেও সংরক্ষণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। কাজলশাহ এলাকার ঐতিহ্যবাহী কাজলশাহ দিঘি, লামাবাজারে অবস্থিত শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর জিউর আখড়ার দিঘিকেও সংস্কার করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। বøু বার্ড স্কুলের ঐতিহ্যবাহী পুকুর ও অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দিঘি সংস্কার করে সুন্দর করা হয়েছে। একইভাবে মজুমদারী দিঘি, দস্তিদারবাড়ীর দিঘি, সৈয়দনীবাগ দিঘিকেও সংস্কার করে সুন্দর করা হচ্ছে। 

সুধীজন,

আমার মেয়াদকালে আরেকটি অর্জন হচ্ছে কদমতলী বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন। ২০১৩ সালের কদমতলী বাস টার্মিনাল আর বর্তমান টার্মিনালের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। এটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচাইতে সুন্দর বাস টার্মিনালের তকমা পাচ্ছে। অনেকটা উন্নত দেশের আদলে ৮ একর ভূমিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে এয়ারপোর্টের আদলে বহির্গমন, আগমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই টার্মিনালের আকর্ষনীয় ও নান্দনিক ডিজাইন ইতোমধ্যে দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কদমতলী বাস টার্মিনালে যাত্রী উঠানামার জন্য রয়েছে পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুবিশাল পার্কিং, পরিবহন সেক্টরের ব্যবসায়ীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট, যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী-পুরুষ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিকবেড, প্রার্থনা কক্ষসহ সকল প্রকার আধুনিক সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আছে ওয়ার্কশপ এবং পরিবহন-মালিক শ্রমিকদের সাথে বৈঠক তথা কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে বিশাল হলরুম।

শুধু বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন নয়, সিলেটবাসীর বহুল আকাংখিত ট্রাক টার্মিনালও নির্মাণ করা হয়েছে আমার মেয়াদকালে। একসময় সিলেটে আসা ট্রাক পার্কিং করার জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান ছিল না। ফলে বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়কে যত্রতত্রভাবে এসব ট্রাক রাখার কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় মারাত্বক বিশৃংখলার সৃষ্টি হতো। তাই জনগুরুত্ব বিবেচনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া এলাকায় প্রায় সাড়ে ৮ একর ভূমিতে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। এই ট্রাক টার্মিনালে সুবিশাল পার্কিং সুবিধা ছাড়াও রয়েছে বৈদ্যুতিক সুবিধা, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার, ট্রাক গ্যারেজ, গভীর নলকূপ, টিকিট কাউন্টার, অ্যাপ্রোচ সড়ক, সেপটিক ট্যাংকসহ নানাবিধ সুবিধা।    

রাস্তা পারাপারে ঝুঁকি এড়াতে আমার মেয়াদকালে একাধিক ফুটওভারব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে বন্দরবাজারে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে টিলাগড় পয়েন্টে ও দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ স্কোয়ারে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

আমি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর নাগরিকদের সুবিধার্থে চালু করেছি নগর এক্সপ্রেস। কম খরচে ও নিরাপদে গণপরিবহন চালু হওয়ায় নগরবাসী উপকৃত হচ্ছেন। পিপিপির মাধ্যমে চালুকৃত নগর এক্সপ্রেসে চলাচল করছে ২১টি বাস। নগর এক্সপ্রেস বাস মালিক সমিতি এটি তত্ত¡াবধান করছে।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, সিলেটে পর্যটকরা আসার পর কখনো কখনো নানা হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে কিছুসংখ্যক পরিবহন ব্যবসায়ীর কাছে তারা অনেক সময় জিম্মি হয়ে পড়েন। সিলেটের স্বার্থে, সিলেটের পর্যটন ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি। পর্যটকদের সুবিধার্থে আমি ভবিষ্যতে ট্যুরিস্ট বাস চালুরও পরিকল্পনা করেছিলাম। আশা করছি পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আপনারা জানেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনবল ও যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে একটি টিমওয়ার্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছি। একইসাথে যন্ত্রপাতি বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করে দ্রততম সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।  

যার ফলস্বরূপ টানা চতুর্থবারের মতো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের সকল সিটির মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। টানা তিনবারের পর বিগত ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও দেশের সকল সিটির মধ্যে প্রথম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের ২০টি দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। প্রতিবারই এজন্য অভিনন্দন স্মারক ও সনদ প্রদান করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

এ অর্জন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলর, বিভাগ-শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফসল। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার জন্যও কৃতজ্ঞতা জানাই।

তবে বারবার আমি আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি কথাই বলি, আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, কখনো যেন আমরা আত্মতুষ্টিতে না ভুগি। নাগরিক সেবা প্রদান ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সবসময় আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ও দায়বদ্ধতার উপলদ্ধি ধারণ করে কাজ করে যেতে হবে।

জাতির বিবেক সাংবাদিকবৃন্দ,

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে আরেকটি যুগান্তকারী কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে আমার মেয়াদকালে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অতীতে অনেক প্রভাবশালী চক্রের লোলুপ দৃষ্টির কারণে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অনেক মূল্যবান জায়গা হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আপনারা জানেন ভূমি সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে জায়গা উদ্ধারের বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তারপরও আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি এবং অনেক ক্ষেত্রে সফলতার দ্বারপ্রান্তে আছি।   

এক্ষেত্রে প্রথমেই বলব, সুবহানীঘাটে হাফিজ কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিকের প্রায় ২৫ শতক ভূমি উদ্ধারের প্রসঙ্গটি। আদালতের রায়ে অত্যন্ত মূলবান এই ভূমি সিলেট সিটি কর্পোরেশন উদ্ধার করেছে এবং বর্তমানে দখলদার হিসেবেও আছে। এই জায়গা থেকে সামান্য দূরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পেছনে আরো প্রায় ১০ শতক ভূমি সিলেট সিটি কর্পোরেশন উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে এবং বর্তমানে দখলদার হিসেবেও আছে।

দাঁড়িয়াপাড়ায় ৮ শতক ভূমিও উদ্ধারপূর্বক বর্তমানে দখলদার হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আপনারা দেখেছেন এই জায়গায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে এম উদ্দিন এন্ড কোং পাম্পের জায়গাটিরও উদ্ধার করে দখল ফেরত নিতে সমর্থ হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এছাড়াও মীরেরময়দানে ছড়াঘেষে বেদখল হয়ে যাওয়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জায়গা উদ্ধারপূর্বক সেখানে স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী স্মৃতি উদ্যানটি নিয়ে মামলায় হাইকোর্টের রায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে এসেছে। তবে এই রায়ের পর লিজগ্রহীতা সুপ্রিম কোর্টের এপিলেট ডিভিশনে লিভ টু আপিল মামলা দায়ের করায় বর্তমানে তা বিচারাধীন আছে। কাজিরবাজার নিয়েও এপিলেট ডিভিশনের রায়ে সিলেটের জেলা প্রশাসককে বাজারের দায়িত্ব গ্রহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, সিলেটের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার মধ্যেও আমি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্যও সচেষ্ট ছিলাম। আশা করছি, আইনানুগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে আগামী পরিষদ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি উদ্ধার কার্যক্রমকে আরো বেগবান করবেন। 

সুধীজন,

আমি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিলাম ২০২০ সালে। করোনা মহামারি এসে আমাদের সিলেট, আমাদের বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছিল। জীবন বাঁচানোর তাগিদে সবাই তখন ঘরবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল। ফলে করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। তখন সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও আমরা যতটুকু পেরেছি মানবিক সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষকে সাহায্যের জন্য আমরা একটি খাদ্য ফান্ড গঠন করেছিলাম। এই খাদ্য ফান্ডে দেশ বিদেশের দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উদারমনে এগিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেসকল স্থান থেকে খাদ্য ফান্ডে অকাতরে দান করেছেন তাদের প্রতি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এক্ষেত্রে সরকার থেকেও আমরা ত্বরিৎ সহযোগিতা পেয়েছি, ফলে আমরা দ্রæততম সময়ের মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার ১শ ৫০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে পেরেছি। ঐসময় সরকারের তরফ থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে ১ হাজার ৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া নগদ ৩৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য নগদ আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৫২ হাজার ০১ টাকা এবং বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এই সহায়তা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা এবং জবাবদিহিতার স্বার্থে বিতরণ পর্যায়ে সম্মানিত কাউন্সিলর ছাড়াও ওয়ার্ড সচিব এবং ২৭টি ওয়ার্ডে জেলা প্রশাসন থেকে ২৭ জন এবং সিটি কর্পোরেশন থেকে ২৭ জন প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসার হিসেবে মনিটরিং করেছেন। পরবর্তী ধাপে মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের আরও ২২ হাজার অসহায় পরিবারের মধ্যে আমরা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি।

বিগত বছর ভয়াবহ বন্যা শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমরা সম্মানিত সিটি কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার এবং নগদ অর্থ বিতরণ করেছি।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে ১৬৩ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে, যার প্রতিটি প্যাকেটে ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার এবং কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নগদ অর্থও বন্যা কবলিত পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং প্রবাসীরা যেভাবে বন্যার্তদের সহযোগিতায় অকাতরে সাহায্য করেছেন তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

প্রিয়জন সাংবাদিক,

মহামারী চলাকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যবিভাগ সীমিত জনবল নিয়েও যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করেছে তা অভাবনীয়। প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রত্যেকটি কর্মী ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা মোকাবেলায় নিজেদের সর্বোচ্চটুকু উজার করে কাজ করেছেন। করোনার গণ টিকাদান কর্মসূচীতে যেভাবে তারা হাজার হাজার মানুষের চাপ সামলে প্রচন্ড ধৈর্য্য ধারণ করে কাজ করেছেন তা সবার নজর কেড়েছে।

মহামারীর শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন এবং সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সিলেট সিটি কর্পোরেশন করোনা মহামারী মোকাবেলায় সর্বোচ্চটুকু করেছে। ২টি জেট স্যাকার গাড়ি ও পানির ট্যাংকি, মটরপাম্পসহ  স্প্রেগান সংযুক্তির মাধ্যমে ৪টি পিকআপ ভ্যানের দ্বারা জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন, চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য বেসিন স্থাপন এবং পরিবহনের জন্য ২টি মাইক্রোবাস প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে হেপাফিল্টার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।

ওসমানী হাসপাতালের নবনির্মিত ইউনিটে যাতে দ্রæততম সময়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন এবং অক্সিজেন সংকট ও আইসিইউ বেড সংকট মোকাবেলায় আশু করণীয় বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে গৃহিত পরামর্শ ও প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা প্রেরণ করেছিলাম। জনগুরুত্ব বিবেচনায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রæততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার আহবান করে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সিলেট নগরীর প্রত্যেকটি কাঁচাবাজারে প্রতিনিয়ত তরলকৃত বিøচিং পাউডার প্রয়োগ করা হয়েছে। সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দের মাধ্যমে ওয়ার্ডের জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগের জন্য ফিনাইল ও বিøচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, ড্রাইভার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী, হতদরিদ্র লোকের মধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এর মাধ্যমে বিদেশ ফেরত লোকজন ১৪ দিনের হোম কোয়ারাইন্টাইন মেনে চলছেন কীনা তা এবং বাজার মনিটরিংয়ের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে টিম পরিচালনা করে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার জন্য ড্রাম বেসিন স্থাপন, বস্তি এলাকায় হাত ধোয়া নিশ্চিত করার জন্য ইউএনডিপি এর মাধ্যমে বেসিন স্থাপন, সাবান বিতরণ ও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মহামারি মোকাবেলায় সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দের সহযোগিতায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা মহামারিতে মৃতুবরণকারী সকল লাশ গোসল করানো, দাফন এবং সৎকারে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করেছে। জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে যেসব স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মকর্তা এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

স্বাস্থ্য শাখার পক্ষ থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, যা চলমান আছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিভাগ এবার হাম রুবেলা ক্যাম্পেইন। জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী ইপিআইর আওতায় ১ বছরের কমবয়সী শিশুদের ১০টি প্রতিষেধক এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম মায়েদের ধনুস্টংকার রোগের টিটি টিকা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

উপস্থিত সুধীজন,

দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আমরা সিলেট সিটি কর্পোারেশনে এই বছর ‘জরুরি পরিচালন কেন্দ্র’ বা ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার চালু করেছি। নগর ভবনের ৬ষ্ট তলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পে স্থাপিত এই প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগ মোকাবেলায় যন্ত্রপাতিও সংযোজন করা হয়েছে। 

দুর্যোগ মোকাবেলায় উদ্ধার কাজ ও সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে ‘জরুরি পরিচালন কেন্দ্র’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেকোন দুর্যোগে সবধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও প্রযুক্তি নির্ভর এই কেন্দ্রটি সচল থাকবে। এখান থেকে সরকারের সাথে যোগযোগ, উদ্ধারকারী সংস্থা সমূহের সাথে সমন্বয় করা যাবে। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে সিসিকের একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে।  এখন থেকে এক ক্লিকেরই গোটা নগরের সকল ধরণের তথ্য, সেবা ও উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যাবে। ফলে আরো স্বচ্ছ ও নির্ভূলভাবে কাজ করতে পারবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

ভূমিকম্পের রেড এলার্ট এলাকা হিসেবে বিবেচিত সিলেটে যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে এমন পরিস্থিতিতেও সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনে স্থাপিত দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘জরুরি পরিচালন কেন্দ্র’টি সচল থাকবে। দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নাগরিকদের সাথে দ্রæত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এই কেন্দ্রটি কাজ করবে।

দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার কাজ পরিচালনায় সেবা প্রদানকারীদের সাথে জরুরি যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে এখান থেকে। এই কেন্দ্রে স্থাপিত ইমার্জেন্সি কল সেন্টার থেকে এক সাথে ৩০টি কল গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া এখানে যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ সহ উদ্ধার কাজের যাবতিয় ত্যথ্যাধি এই্ কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হবে। এই কেন্দ্রে স্থাপিত ডাটাবেসে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ ও সেবা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সিসিকের সকল বিভাগ ও শাখার সেবা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য ভান্ডার করা হয়েছে এই প্রকল্পে।

এ প্রকল্পে ‘জিআইএস’ প্রযুক্তির মাধ্যমে সিসিকের ২৭ ওয়ার্ডের ম্যাপ ও তথ্য সংরক্ষণ,  মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন এবং জিআইএস পোর্টাল তৈরী করা হয়েছে।  যার মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন যেকোন দুর্যোগ এলাকা থেকে সিসিকের নির্ধারিত কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকগণ পোর্টালে সরাসরি রিপোর্ট করতে পারবেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সেবা সংক্রান্ত লজিস্টিক সার্পোট সম্পর্কিত তথ্য জানা যাবে এই পোর্টালে।

দুর্যোগ কবলিত এলাকা সমূহে যদি সবধরণের যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যদি কোন ধরণের যোগ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে এই কেন্দ্র থেকে উদ্ধার কাজ পচিালনায় নিয়োজিত সেবা প্রদানকারী সংস্থা সমূহের সাথে স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে জরুরি তথ্য সেবা প্রদান করা যাবে। এছাড়া স্যাটেলাইটে পুরো এলাকার ভিডিও চিত্র দেখা যাবে। স্যাটেলাইট চিত্র দেখে উদ্ধারকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যাবে এখান থেকে।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বা অন্য এলাকার সাহায্যকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। ‘ডিএমআর’ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিসিকের নিয়মিত সেবা কাজের অগ্রগতি ট্রেকিং করা যাবে। দুর্যোগকালীন সময়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেলেও সিসিকের ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডিএমআর নেটওয়ার্ক’ সচল থাকবে।

সুধীজন,

ডিজিটাল সিটি কর্পোরেশন হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটি রোল মডেল। সিসিকের ডিজিটাল কার্যক্রমের মাধ্যমে নগরবাসী অনলাইনে পানির বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স, এসেসমেন্ট, ট্রেড লাইসেন্স এবং বিভিন্ন ধরনের সনদ প্রাপ্তিসহ নানা ধরনের সেবা পাচ্ছেন। ট্রেড লাইসেন্স শাখাটি সম্পূর্ন ডিজিটালইজড হওয়ায় যেকোনো ব্যবসায়ী অতি সহজেই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন, নবায়ন, লাইসেন্স সংশোধন ইত্যাদি কাজ অনলাইনে অনায়াসে করতে পারছেন। এসেসমেন্ট ও হোল্ডিং ট্যাক্স শাখাকেও প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সফটওয়্যার ভিত্তিক বিলিং প্রক্রিয়ার ফলে বিলিং সিস্টেম আরও সহজতর হয়েছে। ডিটিজাল সনদ সিস্টেম ওয়েবসাইটে লগইন করে একজন নাগরিক তাঁর চাহিদা মোতাবেক যে কোনো প্রকার সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার কাক্সিক্ষত সনদটি অনলাইনের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, এই সেবাটি সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডের নাগরিকবৃন্দও পাচ্ছেন। এছাড়া সিসিকের চলমান ২টি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনলাইনে ভারী যন্ত্রপাতি ভাড়া প্রদানের সিস্টেম। কাজটি শেষ হওয়ার পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারী যন্ত্রপাতি যেমন এস্কাভেটর, ট্রাক, ভিম লিফ্টার, পে-লোডার ইত্যাদি ভারী যানবাহন খুব সহজে অনলাইনে আবেদন করে ভাড়া নেয়া যাবে।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে ইমারত নির্মাণের আবেদন। এটি এমন একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হবে, যার মাধ্যমে একজন নাগরিক স্থাপনা/ইমারত তৈরির অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য আবেদন করবেন অনলাইনে, সেই সাথে আবেদনের অবস্থা, বিল পরিশোধ এবং অনুমোদন প্রাপ্তি সহ সামগ্রিক কার্যক্রম অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন সম্মানিত নাগরিকদের কথা চিন্তা করে হটলাইন চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী নিদিষ্ট শাখার কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলতে পারছেন। আইসিটি বিভাগের অগ্রগতিতে সহায়তা করায় আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ সাদাত হোসেন খান সায়েমকে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

শিক্ষাখাতে আমার স্বপ্ন ছিল কর্মমূখী শিক্ষায় এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। দ্বিতীয় মেয়াদে এসে আমার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। শেভরন ও সুইস কন্টাক্টের যৌথ উদ্যোগে ‘উত্তরণ’ প্রকল্পের আওতায় সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টায় ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয় ভবনে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিবছর ৮শ জন প্রশিক্ষণ গ্রহনপূর্বক দেশে ও বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবেন। এখানে ওয়েল্ডিং, প্লামবিং এন্ড পাইপ ফিটিং, ইলেকট্রিকেল ইন্সটলেশন ও মেইনটেইনেন্স এবং হাউস কিপিং কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়েও একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে।

আপনারা জানেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা দুইজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি।

বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। যাদের মধ্যে মজলিস আমিন চারাদিঘীরপাড় সিটি বেবী কেয়ার একাডেমী ভারত সরকারের অর্থায়নে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনে উন্নীত করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই বহুতল ভবন করে দেওয়ায় আমি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন আখালিয়ায় অবস্থিত বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, চৌহাট্টায় অবস্থিত ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়, বাগবাড়িতে অবস্থিত বর্ণমালা সিটি একাডেমি এবং সর্বশেষ ২০২২ সাল থেকে কুমারগাও প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে ও বস্তি এলাকায় ১০টি স্যাটেলাইট স্কুল পরিচালনা করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এসব স্কুলে স্কুল ড্রেসসহ প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

শিক্ষার পাশাপাশি শিশু কিশোরদের চিত্ত বিনোদনের জন্য দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে সুরমা নদীর তীরঘেষে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নামে পার্ক নির্মাণ কাজের সূচনা করি। পরবর্তীতে নানা জটিলতায় পার্কের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রকল্পের নাম জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক নির্ধারণ করে ২৫ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেন। আধুনিক রাইড স্থাপন করে ২০২১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্কটি চালু করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে জালালাবাদ পার্কটিকেও সংস্কার করে শিশু পার্কে রূপান্তর করা হয়। 

আরেকটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, সিলেটে ধীরে ধীরে খেলার মাঠের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় পাড়ায় পাড়ায় খেলার মাঠ ছিল, শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গার অভাব ছিল না। কিন্তু এখন আর সেই সুদিন নেই।

শিশু-কিশোরদের কথা চিন্তা করে এবার আমরা টিলাগড় পয়েন্টে একটি ইনডোর ফুটসাল ভেন্যু নির্মাণ করেছি। আমি মনে করি, সিলেটের প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ১টি করে যদি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধানে ইনডোর খেলার ভেন্যু নির্মাণ করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও খেলার মাঠের অভাব মিটবে। এই দিকটি বিবেচনা করে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহর সি বøকে ১.৭০ একর জায়গায় মেয়েদের জন্য ইনডোর ভেন্যু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যার ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ইনডোরের চারপাশ দিয়ে ওয়াকওয়েরও ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

একই ওয়ার্ডের আই বøকের মাঠের উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এই মাঠের চারপাশে ১০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট নেটের বেড়া থাকবে এবং বেড়াঘেষে ৬ ফুট প্রশস্ত ওয়াকওয়ে থাকবে। মাঠ থেকে বৃষ্টির পানি যাতে দ্রæত নিস্কাশন হয় সেজন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি মাঠে সবুজ ঘাসের আচ্ছাদন থাকবে। এই বিষয়ে আমার অভিমত হচ্ছে, মহানগরীর বড় বড় মাঠে বানিজ্য মেলা আয়োজনের নামেও মাঠগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। খেলার মাঠে যাতে কখনো মেলা আয়োজন করা না হয় সে ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া জরুরী। 

সিলেটের ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন টি টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে যাতে সহযোগী হিসেবে ছিল সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশন। সিলেটের উদীয়মান প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করেন। জাতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটার অংশগ্রহন করায় টুর্নামেন্টে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। ফাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটি টিমের ফাঞ্চাইজি হিসেবে ছিল। এই টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করায় সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশন এবং সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ ফাঞ্চাইজি হিসেবে যারা দলভুক্ত হয়েছিলেন তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সচেতন সাংবাদিকবৃন্দ,

আমার মেয়াদকালে সিলেটের কয়েকশ বছরের পুরনো হযরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থান আধুনিকায়ন ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় চালিবন্দর শশ্মানঘাটের উন্নয়নকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মণিপুরী শশ্মানঘাটের উন্œয়নকাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

হযরত শাহজালাল রহ. মাজারের মূল সড়কের আধুনিকায়ন এবং ড্রেন নির্মাণশাজ করা হয়েছে। মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ঈদগাহের সীমানা প্রাচীর এবং প্রাচীরঘিওে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেটের প্রথম মুসলমান হযরত গাজী বুরহান উদ্দীন রহ: মাজার মসজিদ সম্প্রসারণ, মাজার সংলগ্ন রাস্তা প্রশস্তকরণ করে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নীতকরণসহ নানাবিধ উন্নয়ন করা হয়। নগরীর কুশিঘাটের শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়ার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এছাড়াও চালিবন্দও ভৈরব ও দুর্গা মন্দিরের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হয়। সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মণিপুরী রাজবাড়ি মন্দিরের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

সিলেট নগরীর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট বৌদ্ধ বিহারের দ্বিতল মন্দির ও প্রার্থনা ভবনের কাজ সম্পন্নের উদ্যোগ গ্রহন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মীয় স্থাপনা ও সিলেট অঞ্চলের স্থাপত্য রীতির সম্মিলনে শতবছরের পুরনো নয়াসড়কের পাদ্রী টিলার নতুন নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

সিলেটে এখন একটি দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়েছে এবং এজন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদান অনস্বীকার্য। বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে চমৎকার এই নকশা করার জন্য আমি স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী এবং এই কাজে সম্পৃক্ত তার টিমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন, এই শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভের পাশাপাশি শহীদ মিনারকে ঘিরে রয়েছে মুক্তমঞ্চ, মহড়াকক্ষ ও প্রদর্শনীর স্থান। শহীদ মিনারের গ্রাউন্ডের নিচে সংগ্রহশালা করা হয়েছে, যেখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, স্মৃতিচিহ্ন ও ছোট্ট পাঠাগার।

শহীদ মিনার সংলগ্ন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও স্মৃতিস্তম্ভ এর উন্নয়নকাজ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করার জন্য ঐতিহ্যবাহী সারদা হলের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সিলেটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমনের শতবর্ষপূর্তিতে বর্নাঢ্য আয়োজনে ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষ স্মরণোৎসব‘ উদযাপন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৭ জন ভাষা সৈনিককে সম্মাননা জানানো হয়েছে।

সিলেটের দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে চৌকিদেখী ও এয়ারপোর্ট রোডের সম্মিলনস্থলের পাশে সিলেট তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেট-ঢাকা সড়কের সিলেট অভিমুখী প্রবেশমুখে মক্কা নগরীর আদলে পবিত্র কুরআন শরীফের স্ট্যান্ড (রেয়াল) এর ন্যায় তোরণ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। প্ল্যান ডিজাইন চ‚ড়ান্ত করে ইতোমধ্যে এই কাজের জন্য টেন্ডারও আহবান করা হয়েছে।

কদমতলী চত্বরকে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর হিসেবে নামকরণ করে নতুন নকশায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নান্দনিক ডিজাইনের বিভিন্ন জায়গায় ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওসমানী জাদুঘরের ফটক, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রধান ফটক, শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজের ফটক, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান ফটক, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটক, সিলেট প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রধান ফটক, বøু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটক, কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের প্রধান ফটক, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটক। এছাড়াও ডায়াবেটিক হাসপাতালের ফটকের নির্মাণকাজও চলমান আছে।

সুধীজন,

আমি প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপর যে কয়টি কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হকারমুক্ত ফুটপাত ও পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন ফুটপাত হকারমুক্ত করতে আমি আমার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি।

এক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এক্ষেত্রে শতভাগ সফল হওয়া যায়নি।

জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ একযোগে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ না করলে নগরবাসী এই সমস্যা থেকে কোনদিন রেহাই পাবেন না-এটা আমার অভিজ্ঞতালদ্ধ অভিমত। আপনারা দেখেছেন, আমরা লালদিঘীরপাড়ে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা স্বত্বেও এখনো ফুটপাত ও রাস্তায় হকাররা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে।

মহানগরীর যানজট নিরসনের জন্যও অনেক উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও এক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।

আপনারা দেখেছেন, ২০২১ সালে আমরা সিলেটের গুরুত্বপূর্ন সড়ক হিসেবে বিবেচিত জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, রিকশা ভ্যান, হাতাগাড়ি বন্ধ করেছিলাম। এক্ষেত্রে অসহনীয় যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রনও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সিলেট নগরীতে এখন এতবেশি যানবাহনের আধিক্য হয়েছে, বিশেষ করে এতবেশি সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। হতাশার বিষয় হচ্ছে, এসব গাড়ী চলাচলের যারা অনুমতি দিচ্ছেন এবং যারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা যেন এক্ষেত্রে নির্বিকার। একটি বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী যানবাহন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা না হলে সিলেট নগরীর যানজটের হিসেবে ‘মিনি ঢাকায়‘ রূপ নেবে।

সুধীবৃন্দ,

আপনারা দেখেছেন আমার মেয়াদকালে সিলেট মহানগরীতে কয়েকটি চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কয়েকটি স্থাপনা এবং চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার কর্তৃক জারিকৃত সিটি কর্পোরেশনের সড়ক, ভবন ও স্থাপনা নামকরণ নীতিমালা ২০১৪-অনুযায়ী নামকরণ প্রস্তাব যাচাই বাছাই কমিটির সুপারিশ এবং একই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সিলেট ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাস টার্মিনাল নামকরণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

এছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট এবং সড়ক যাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে তা হচ্ছে যথাক্রমে শাহী ঈদগাহ উঁচা সড়ক আল্লাহসুবহানাতায়ালার ৯৯ নাম, সিটি পয়েন্ট সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান চত্বর, কোর্ট পয়েন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীম পয়েন্ট, নাইওরপুল চত্বরের নাম মিশন চত্বর, আম্বরখানা পয়েন্ট মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চত্বর, কাজীরবাজার পয়েন্ট জিতু মিয়া পয়েন্ট, নাইওরপুল মসজিদ সংলগ্ন পয়েন্ট সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান বাবরুল হোসেন বাবুল চত্বর, কুমারপাড়া মসজিদ সংলগ্ন পয়েন্ট সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান আ ফ ম কামাল চত্বর, এমসি কলেজ মাঠের পশ্চিম পাশের দক্ষিণ বালুচরের নতুন নির্মিত রাস্তা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সড়ক, শাহী ঈদগাহ মিনার সংলগ্ন পয়েন্ট সাবেক কমিশনার আব্দুল ওয়াদুদ খালেদ পয়েন্ট, সিটি কর্পোরেশন নির্মিত টিলাগড় মিনি স্টেডিয়াম সাবেক কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাজু স্টেডিয়াম, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কুমারপাড়ায় নির্মিত ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নাম ওসমান মিয়া মার্চেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, কুমারগাও তেমুখী পয়েন্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চত্বর, তেলিবাজার চত্বর সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান চত্বর, লিংক রোড আব্দুল হামিদ সড়ক, শেখঘাট থেকে লামাবাজার সড়ক সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী সড়ক, দুর্গাকুমার পয়েন্ট থেকে জেলরোড পর্যন্ত শহীদ আলকাছ সড়ক, চৌহাট্টা পয়েন্ট আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া চত্বর, লালবাজার গলি সাধুবাবু সড়ক।

এই প্রসঙ্গে আমি দুটি কথা বলতে চাই। আমার নামে একটি পয়েন্ট নামকরণের প্রস্তাবনা দিয়ে সম্মানিত করার জন্য আমি পরিষদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আমি আমার মেয়াদকালে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ সিলেটের অনেক ভাষাসৈনিক, রনাঙ্গনের অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য আলেম, প্রথিতযশা সাংবাদিকসহ অনেক গুনীজনের নাম যথাযথ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি-সেই মর্মবোধ থেকে আমার নামে নামকরণের উক্ত প্রস্তাবটি আমি বিনয়ের সাথে বিয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রিয় সাংবাদিকৃবন্দ,

সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকা সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে কাজের পরিধিও বিস্তৃত হয়েছে। সেজন্য টুকেরবাজার এবং খাদিমপাড়ায় দুটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। একইভাবে এবার আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৫টি ওয়ার্ডের কার্যালয় নির্মাণকাজও সম্পন্ন হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১, ৭, ৮, ১৪ এবং ২৬। আশা করছি ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডের স্থায়ী কার্যালয় করা হবে।

কথা অনেক হয়ে গেছে। এবার খুব সংক্ষেপে আগামীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য কী কী কাজ করা যেতে পারে সেজন্য আমি কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েই আমি বাজেট ঘোষণা করব।

আগামীর সমৃদ্ধ সিলেট গড়তে হলে ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ হলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। অথচ ‘আগামীর সিলেট’ কিংবা আজ থেকে ৫০ বছর পর আমরা কিভাবে সিলেট নগরীকে দেখতে চাই, তার চিন্তাভাবনা শুরু করা জরুরি। 

সবাই মিলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে ‘নতুন সিলেট’ গড়া খুবই সম্ভব। এই ‘নতুন সিলেট’ হবে পরিচ্ছন্ন। এই ‘নতুন সিলেট’-এ থাকবে না কোন যানজট। এই ‘নতুন সিলেট’-এ থাকবে মেট্রোরেল। এয়ারপোর্ট, বাস টার্মিনাল কিংবা রেল স্টেশনে নেমেই যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়ে সহজেই চলে যাবেন তাদের গন্তব্যে।

থাকবে খোলা উদ্যান। থাকবে সাইকেল লেন। থাকবে বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং ভবন। মার্কেটে মার্কেটে হেঁটে হেঁটে শপিং করবেন নাগরিকরা। এই ‘নতুন সিলেট’-কোন অলীক স্বপ্ন নয়। এই ‘নতুন সিলেট’ গড়া খুবই সম্ভব। প্রয়োজন সঠিক সুন্দর পরিকল্পনা-সরকারের সদিচ্ছা, সবার আন্তরিকতা।

সিলেট নগরীর মানুষের কথা চিন্তা করে খুব তাড়াতাড়ি শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করতে হবে, পরিকল্পনামাফিক সুরমা নদীর খনন নিশ্চিত করতে হবে, চা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ছড়া ও খাল অবৈধ দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, স্বতন্ত্র সুয়ারেজ সিস্টেম চালু করতে হবে, নগরবাসীর জন্য স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরি করতে হবে, চেঙ্গেরখাল পানি শোধানাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, ৪ হাজার ১শ ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, এতে করে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হবে।

খেলার মাঠ, আধুনিক পশু জবাইখানা, আধুনিক পাইকারি বাজার, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার ও ট্যুরিস্ট বাস চালুর পাশাপাশি ভূমিকম্প শেল্টার গ্রাউন্ড তৈরী করতে হবে। ১৫ একর জায়গাজুড়ে প্রস্তাবিত এক ছাদের নিচে ব্যবসায়িক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক কমপ্লেক্স করার প্রয়াস ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমপ্লেক্স‘ এর কাজ দ্রæত শুরু করতে হবে।

সবশেষে আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে, এখন যেহেতু সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকা অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে সেজন্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ, কিংবা প্রয়োজনে অন্যত্র স্থানান্তর করার পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। 

সুধীবৃন্দ,

এবার আমি আল্লাহর রহমত এবং সিলেটের নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে অধিকতর সুযোগ সুবিধা ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং স্থানীয় সরকার নির্দেশিত বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম অবলম্বনে সিটি কর্পোরেশনের জন্য প্রণীত অভিন্ন বাজেট ফরমের আলোকে “সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সর্বমোট ৯২৫ কোটি ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা আয় ও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত গুলো হলো হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৮ কোটি ৩৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্থান্তরের উপর কর ২৫ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃ নির্মাণের উপর কর ২ দুই কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা, বিজ্ঞাপনের উপর কর ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, ঠিকাদারী তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, ল্যাব টেষ্ট ফিস বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ২ কোটি টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ২০ লক্ষ টাকা, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৫ কোটি টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৫০ লক্ষ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৩০ লক্ষ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কের টিকিট বিক্রয় থেকে আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ১ এ মোট ১০৫ কোটি ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এবং পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৭ কোটি টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ফিস বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, নলকুপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকাসহ রাজস্ব হিসাব উপাংশ ২ এ মোট ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। সম্মানীত নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট ১২৩ কোটি ৪০ লক্ষ ১১ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বাজেটে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, নন-ডিপিপি এবং ডিপিপি সরকারি অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে প্রাপ্তি ৫২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা এবং নিজস্ব মার্কেট নির্মাণ খাতে ৩৭ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।

এবারের বাজেটে রাজস্ব খাতে সর্বমোট ১১২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন খাতে ৫২ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা, শিক্ষা খাতে ব্যয় ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, পরিচ্ছন্নতা খাতে ব্যয় ১৯ কোটি ৬০ টাকা, বিদ্যুত প্রকৌশল/সড়ক বাতি খাতে ব্যয় ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সমাজকল্যান ও বস্তি উন্নয়ন খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, বিবিধ ৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, এর মধ্যে ভ‚মি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৫ লক্ষ টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপন খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, নাগরিক সম্বর্ধনা ও আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৮০ লক্ষ টাকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, রিলিফ/জরুরী ত্রাণ ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, আকষ্মিক দূর্যোগ/বিপর্যয়/করোনা ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা, কার্যালয়/ভবন ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, নিরাপত্তা/সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় খাতে ৯০ লক্ষ টাকা, ডিজিটাল মেলা আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ২০ লক্ষ টাকা উল্লেøখযোগ্য। এছাড়া পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয় সহ পানির লাইনের সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত সংস্কার ও বিদ্যূত বিল পরিশোধসহ মোট ১৮ কোটি ০১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে রাজস্ব খাতে ব্যয় বাবদ মোট ৩৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত/সংস্কার, ব্রীজ/কালভার্ড নির্মাণ, ব্রীজ/কালভার্ড মেরামত/ সংস্কার, ড্রেইন নির্মাণ/মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি কর্পোরেশনের ভবন নির্মাণ/মেরামত, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লিয়াঁজো অফিসের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাই খানা নির্মাণ/ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষণা-বেক্ষনে ওয়ার্কসপ নির্মাণ, হাট বাজার উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল সংস্কার ও উন্নয়ন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকুপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষনা-বেক্ষন কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জীপ গাড়ী ও ২টি আধুনিক এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহন ব্যয়সহ ইত্যাদি ব্যয় উল্লেখযোগ্য। 

নন-ডিপিপি, ডিপিপি সরকারি অর্থায়নে এবং উন্নয়ন অংশীদার অর্থায়িত প্রকল্প সমুহের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ৫২৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ খাতে ১০ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ মোকাবেলা, ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাত সহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী খাতে ৩৪ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ১৮৫ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সিলেট মহানগরীর ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ৪৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা, হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং হযরত শাহপরান (রহঃ) মাজার উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প খাতে ২৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা, নগর ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ প্রকল্প খাতে ১১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাইড স্থাপন খাতে ২ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন প্লাষ্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন ৫ কোটি টাকা, তোপখানাস্থ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ভুমিতে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও ষ্টাফ কোয়াটার নির্মাণ প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাজার, কবরস্থান, শ্মশান ঘাট, ঈদগাহ উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, সুরমা নদীর উত্তর তীর ঘেষে সার্কিট হাউসের সম্মুখ তে বোরহান উদ্দিন সড়ক পর্যন্ত রিটেননিং ওয়াল এবং ওয়াকওয়েসহ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, উৎপাদন নলক‚প স্থাপন ৫ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্যুয়ারেজ মাষ্টার প্লান্টের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নক্সা প্রণয়ন প্রকল্প ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রকিবন্ধকতা অপসারন প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এসফল্ট প্লান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণ খাতে ২০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ফিলিং ষ্টেশন স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়াস্থ সিটি কর্পোরেশনের ওসমান মিয়া মার্চেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীতে যানজট নিরসনে ৪টি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি গরুর হাট নির্মাণ খাতে ৮ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি জবাইখানা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন খাতে ৭ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অফিস নির্মাণ খাতে ১০ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অফিস স্থাপনে ভ‚মি ক্রয় খাতে ১০ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় খেলার মাঠ নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, নগরীর বস্তি সমুহের উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকাসহ মোট ৪৫৭ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ডিপিপি ও নন-ডিপিপি সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি, উন্নয়ন অংশীদার অর্থায়িত প্রকল্প বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ২৯ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, বিশ^ব্যাংকের অর্থয়ানে আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের আওতায় ইওসি প্রকল্প খাতে ৫ লক্ষ টাকা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় নাগরিক বৃন্দের জীবন মান উন্নয়নে (মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা, টিকাদান, পুষ্টি সেবা) প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা, সেইভ দ্যা চিলড্রেন এর আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশের নগর জনস্বাস্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্প খাতে ৬ লক্ষ টাকা, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, এবং সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প খাতে মার্কেট নির্মাণ বাবদ প্রাপ্ত সালামী ও সিটি কর্পোরেশন আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাবদ মোট ৩৭ কোটি টাকা প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে ব্যয় ধরা হয়েছে।

বাজেট তৈরীতে এবার সহযোগিতা করেছেন অর্থ ও সংস্থাপন কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জনাব রেজওয়ান আহমদ, সদস্য কাউন্সিলর জনাব আব্দুর রকিব তুহিন, কাউন্সিলর জনাব আযম খান, কাউন্সিলর শাহানারা বেগম, কাউন্সিলর জনাব আব্দুল মুহিত জাবেদ এবং সদস্য সচিব প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জনাব আ.ন.ম. মনছুফ। তাঁরা যে সময় ও শ্রম দিয়েছেন সেজন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এবার আমি বিগত কয়েকযুগে সিলেট মহানগরীর উন্নয়নে অবদানের জন্য আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব এম. সাইফুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী ‘গুণীশ্রেষ্ঠ’ আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রিয়ার এডমিরাল এম এ খান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ খন্দকার আব্দুল মালিকসহ সকল গুণীজনকে। আজ তাঁরা নেই কিন্তু তাদের কাজের সুফল ভোগ করে আমরা আজ ও আগামীর স্বপ্ন দেখছি। তারা আমাদের প্রেরণার উৎস।

সিলেটের গুণী পরিবারের সন্তান, সিলেটের উন্নয়নে অন্তপ্রাণ ব্যক্তিত্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির প্রতিও। 

এই নগরীর উন্নয়নে পৌরসভা এবং পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা অতীতে তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, শ্রম ব্যয় করেছেন সেই তিন জননন্দিত ব্যক্তিত্ব স্বাধীন বাংলাদেশে সিলেট পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান বাবরুল হোসেন বাবুল, পৌর চেয়ারম্যান মরহুম আ.ফ.ম কামাল এবং অধুনালুপ্ত সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ও দুই বারের নির্বাচিত মেয়র মরহুম বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে আজ আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এই তিন ব্যক্তিত্ব সিলেটবাসীর হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন। অধুনালুপ্ত সিলেট পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সকল কমিশনার ও কাউন্সিলরদের প্রতিও আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

একইসাথে আমি নতুন মেয়র জনাব আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং নবনির্বাচিত সকল কাউন্সিলরদের প্রতি শুভ কামনা জানাচ্ছি।

এই পর্যায়ে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার বুজর্গ, আমার সিলেটের সকল বরেণ্য আলেম ওলামাদেরকে। এই মুহুর্তে আমি শ্রদ্ধার সাথে পর্যায়ক্রমে স্মরণ করছি মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা নুর উদ্দিন গহরপুরী, মাওলানা ওবায়দুল হক, মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আমীনুদ্দিন শায়খে কাতিয়া, মাওলানা খলিলুর রহমান বর্ণভী, মাওলানা শফিকুল হক আমকুনি, মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া, মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, মাওলানা আকবর আলী, মাওলানা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি, মাওলানা আব্দুল গাফফার মামরখানি, খতিব মাওলানা উবায়দুল হক, মাওলানা আবদুল্লাহ হরিপুরী, মাওলানা হরমুজ উল্লা, মাওলানা শিহাব উদ্দিন, মাওলানা ইউসুফ শামপুরীকে।

আজ আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি।

ধন্যবাদ জানাচ্ছি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের যারা আমার মেয়াদকালে এই নগরীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অংশীদার হয়ে কাজ করেছেন।

ধন্যবাদ জানাচ্ছি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিমা ইয়াসমিনকে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হক, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী রুহুল আলমসহ সকল নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকৌশল শাখার সকল কর্মকর্তাদের। ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামসহ স্বাস্থ্য শাখার সকল কর্মকর্তাদের।

ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ রায় এবং নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ফারিয়া সুলতানাকে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আ. ন. ম. মনছুফসহ একাউন্টস বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে, ধন্যবাদ জানাচ্ছি কনজারভেন্সি অফিসার মোঃ হানিফুর রহমানসহ এই শাখার সকল কর্মকর্তাকে, শিক্ষা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আখঞ্জী ও শিক্ষা উপদেষ্টা অনিল কৃষ্ণ মজুমদারকে, ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সহকারী একান্ত সচিব সুহেল আহমদ এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আহমেদ মুহাইমিন চৌধুরীকে।

এছাড়াও প্রশাসন শাখা, বিদ্যুৎ বিভাগ, জনসংযোগ শাখা, আইন শাখাসহ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নগরীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সবসময় সহযোগী হিসেবে পাশে থাকায় বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার মেয়াদকালের প্রকৌশল বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের কৃতিসন্তান মরহুম প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। 

আজ আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম শফিকুল হক চৌধুরীকে। জীবনের শুরুতেই নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা, নেক নিয়তে মানুষের জন্যে কাজ করার দীক্ষা আমি প্রথমেই আমার পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।

পরিশেষে একজন ‘বিশেষ’ মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, তিনি হচ্ছেন আমার সহধর্মিনী সামা হক চৌধুরী। আপনারা জানেন, সিলেটের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে আমি অতীতে অনেক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছি। সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় আমার স্ত্রীকেও কারান্তরীণ করা হয়েছিল। আমার প্রতি এবং আমার পরিবারের প্রতি এত অবিচার স্বত্বেও তিনি কখনো মনোবল হারাননি। শক্ত হাতে পরিবারকে সামলানোর পাশাপাশি তিনি আমাকে সত্য ও ন্যায়ের পথে লড়াই করতে সাহস যুগিয়েছেন-মানুষের কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকতে আমাকে প্রেরণা দিয়েছেন। আমার জীবন চলার পথে তাঁর অপরিসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষা স্বল্প সময়ে বলা সম্ভব না।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একান্ত আপনজন হিসেবে আমার স্ত্রী ছাড়াও আমার বড় মেয়ে আর্কিটেক্ট সাঈকা তাবাসসুম নাহিয়াও বিভিন্ন সময়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার লব্ধ মেধা ও জ্ঞান সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে আমার সাথে শেয়ার করে সিলেটের মানুষের প্রতি তার দরদ প্রকাশ করেছে। এই দুইজন ছাড়াও প্রকাশ্যে এবং নেপথ্যে থেকে আমার অনেক শুভাকাংখী তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের সকলের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।    

সিলেটবাসীর কাছে আমার অনুরোধ আপনারা আমার মরহুম পিতা, অসুস্থ বৃদ্ধা মা, আমার স্ত্রী ও তিন সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। পরিশেষে আমি আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতার জন্য সিলেটবাসী তথা দেশবাসীর প্রতি দোয়ার আহবান জানাচ্ছি।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আমি আমার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। 

আমার একটি মর্মবেদনা হচ্ছে, আমি মেয়র পদে আসীন হয়ে মানুষের খেদমত করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি এটা আমার শ্রদ্ধেয় নেতা এম. সাইফুর রহমান দেখে যেতে পারেননি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে তাঁর প্রভাব আমার কাজে-কর্মে সবচাইতে বেশি। তাঁর সান্নিধ্য আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে জনগণের জন্য দলমতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হয়। তাঁর মৃত্যুর একযুগ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো প্রতিটি দিন-প্রতিটি কাজে আমি তাঁকে অনুভব করি।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সিলেটবাসীর অহংকার, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী, মরহুম এম সাইফুর রহমানের কাছে আমি চিরঋণী। মরহুম এম সাইফুর রহমান উন্নয়নের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তাঁর সেই আদর্শকে ধারণ করেই রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে সিলেট মহানগরীর উন্নয়নে সবসময় কাজ করেছি।

কথা দিচ্ছি, মেয়র না থাকলেও নগরবাসীর ঋণ শোধ করার তাগিদে সিলেটের সকল ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে-সকল কল্যাণমূলক কাজে এবং আপনাদের সুখে দুখে সবসময় পাশে থাকব।

প্রিয় সিলেটবাসী,

মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে সিলেট সফরকালে এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন, সিলেটবাসীর মায়া ও মমতা নিয়েই তিনি মরতে চান। সবার ভালোবাসার মধ্য দিয়ে-সবাইকে কাঁদিয়েই তিনি চির বিদায় নিয়েছিলেন। আমাকেও একদিন আমার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। সবাই শুধু দোয়া করবেন, আমিও যেন সিলেটবাসীর মায়া ও মমতা নিয়েই চিরবিদায় নিতে পারি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে সুস্থ ও সুখী রাখুন।

আল্লাহ হাফেজ।

 

(আরিফুল হক চৌধুরী)

মেয়র, সিলেট সিটি কর্পোরেশন।